রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন শিক্ষাচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো।
![]() |
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন শিক্ষাচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো। |
✍️ কলম
সুপ্রিয় বন্ধুরা,
আজকের পোস্টে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন শিক্ষাচর্চা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করলাম। নীচে খুব সুন্দরভাবে আজকের এই বিষয়টি সম্পর্কে আলোচনা করা আছে, সুতরাং দেরি না করে নোটসটি দেখে নাও।
■ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তার শান্তিনিকেতন ভাবনাঃ
"বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহারো,
সেইখানে যোগ তোমার সাথে আমারও"
ভারত মায়ের অন্যতম সন্তান তথা বিশ্ববরেন্য শিক্ষারত্ন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জ্ঞানের আলোর ছটা শুধু ভারতবর্ষকে নয়, সারা বিশ্বকে আলোকিত করেছে।জীবনের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ঘনিষ্ট পদক্ষেপ রাখেননি। তাঁহার শিক্ষা তথা সমাজ চিন্তাই শান্তিনিকেতন বাস্তব রূপায়ণ। যা বিশ্বকে শান্তিনিকেতনে এনে উপস্থিত করেছেন। এই শান্তিনিকেতন শুধু বাংলার নয়,নয় শুধু ভারতবর্ষেরও, তা সারা বিশ্বের মহামানবের মিলনক্ষেত্র। এ প্রসঙ্গে জওহরলাল নেহেরু বলেছেন,
"Who never seen Santiniketan, never seen India."
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০১ সালে শান্তিনিকেতনে আশ্রমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে বিশ্বমানবতাবাদের যে বৃক্ষটি রোপন করেছিলেন তা ক্রমে ক্রমে রাজ্য, দেশ ও বিশ্বে আলো ও সৌন্দর্য ছড়ায়। শান্তিনিকেতন প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন- "ঐ বোলপুরের প্রান্তরটিকে সমস্ত জাতিগত ভূগোলের বৃত্তান্তের অতীত করে তুলব।"
প্রাচীন ভারতের গুরুকুল শিক্ষাব্যবস্থার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন, তা ১৯২১ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। আশ্রম বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তাঁহার উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃতির প্রান্তরে, উজ্জ্বল প্রভাতী আলোর মোড়কে শিশুদের মনন-চিন্তনকে স্পর্শ করতে পেরে -এমন আনন্দ মুখর সয়ংক্রিয় উদার মানবতার শিক্ষালয় স্থাপন করতে পারা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, "আমার একান্তই ইচ্ছা ছিল যে, এখানকার এই প্রভাতের আলোয়, শ্যামল প্রান্তর, গাছপালা যেন শিশুদের চিত্ত স্পর্শ করতে পারে। কারণ প্রকৃতির সাহচর্যে তরুণ চিত্তে আনন্দ সঞ্চারের দরকার আছে। এই উদ্দেশ্য আমি আকাশ আলোর অঞ্চশায়ী উদার প্রান্তরে এই শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করেছিলুম।"
■ রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন শিক্ষাচিন্তার বৈশিষ্ট্যঃ
আশ্রমিক শিক্ষার কেন্দ্রভূমি হিসাবে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে বিদ্যালয় প্রতিস্থাপন করেছিলেন,যে সব বৈশিষ্ট্য গুলির নিরিখে তা নিম্নরূপ-
- সক্রিয়তাঃ
এখানে শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা দানের মধ্য দিয়ে এবং তাদের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় করে তোলার ওপর জোড় দেওয়া হয়েছে।
- স্বাধীনতাঃ
Freedom of mind, freedom of art, freedom of will- এই বিষয় গুলো গুরুত্ব দিয়ে শান্তিনিকেতনে আশ্রমিক শিক্ষা ব্যবস্থাতে অবাধ স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ইচ্ছামতো খেলাধুলা করবে ও পড়াশোনা করবে। তাদের বিধিনিষেধের মধ্যে আটকে রাখা চলবে না।
- সাম্যঃ
জাতিধর্মের কোন বাঁধাই এখানে থাকবে না। ছেলেরা একসাথে খেলবে পড়বে,খাবে।
- মাতৃভাষায় শিক্ষাদানঃ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মাতৃভাষাকে মাতৃদুগ্ধের সাথে তুলনার মাধ্যমে শান্তিনিকেতনের শিক্ষাব্যবস্থায় মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের আয়োজন করেন। যেভাবে মাতৃদুগ্ধের অভাবে শিশুর সামগ্রিক বিকাশ বিঘ্নিত করে, তেমনি মাতৃভাষাকে অবহেলা করলেও শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়।
- পল্লী উন্নয়নঃ
সমাজসেবা ও পল্লীউন্নয়ণমূলক কাজ শান্তিনিকেতনের শিক্ষার আর একটি উল্ল্যেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। সমাজসেবার মাধ্যমে শিক্ষাথীর মধ্যে সমাজ চেতনার বিকাশ ঘটবে।
- সহ পাঠ্যক্রমিক কার্যাবলীঃ
শিক্ষাথীদের সুপ্ত সম্ভবনাকে বিকশিত করে তোলার জন্য বৈচিত্র্যপুর্ণ সহপাঠ্যক্রমিক কাজকর্মের আয়োজন করা হয়। গীতি, নৃত্য, চারুকলা, অঙ্কন প্রভৃতি কাজে স্বয়ংক্রিয় অংশগ্রহণের ব্যবস্থা ছিল।
- কর্মমুখী শিক্ষাদানঃ
শান্তিনিকেতনের কর্মমুখী শিক্ষাদান গতানুগতিক পুঁথিগত বিদ্যা অধ্যায়নের পরিবর্তে রবীন্দ্রনাথ কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষা প্রবর্তনের উপর বেশি জোর দিয়েছেন। যার মধ্য দিয়ে তারা বৃহত্তম কর্মকান্ডের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবে।
- গৃহ পরিবেশঃ
শিক্ষার্থীরা গৃহ পরিবেশে বাস করে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে একান্ত মধুর থাকবে। এখানে কোনো প্রকার শাস্তির ব্যবস্থা থাকবে না।
- শিল্পশিক্ষাঃ
শান্তিনিকেতনে আশ্রমিক শিক্ষায় হাতে কলমে শিল্পশিক্ষা দেওয়া হত। নানান রকম কুঠির শিল্প,তাঁত শিল্প,কাঠের কাজ, মাটির কাজ, অঙ্কন চর্চা, চামড়ার কাজ, কৃষিকাজ, উদ্যান পরিচর্চার শিক্ষা দেওয়া ব্যবস্থা ছিল।
- প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবধারার সমন্বয়ঃ
শান্তিনিকেতন শিক্ষার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবধারার সমন্বয় সাধননের দ্বারা বিশ্বভ্রাতৃত্বের গোড়াপত্তন করেছিলেন।
- প্রকৃতির সান্নিধ্যে শিক্ষাঃ
উদার উন্মুক্ত প্রকৃতির কোলে শিক্ষার্থীদের মুক্ত ভাবে প্রকৃতির সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার শিক্ষা দেওয়া হয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আজ কেবল শুধু পশ্চিমবাংলা তথা ভারতবর্ষের নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীদের মহামানবের মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
No comments:
Post a Comment